ফুটবল বিশ্বকাপ এবং আর্জেন্টিনা

বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে অনেক বড় দল হতে পারে আর্জেন্টিনা। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে আর্জেন্টিনার যাত্রাটা বলতে গেলে প্রায় উল্টো। অথচ শুধু জনপ্রিয়তা হিসেব করলে আর্জেন্টিনার সমকক্ষ পাওয়া যাবে কেবল ব্রাজিলকে। এই দলটার শো-কেসে বিশ্বকাপ কি না মাত্র দুটি।
তিনটি হওয়া বিচিত্র কিছু ছিল না। ব্রাজিল বিশ্বকাপে সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছিল লা আলবিসেলেস্তারা। একে একে সব বাধা পেরিয়ে লিওনেল মেসির নেতৃত্বে দুরন্ত গতিতে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লেখায় আর্জেন্টিনা। ফাইনালে তাদের সামনে জার্মানি। ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পরও কেউ গোল করতে পারেনি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে মারিও গোৎসের দুর্দান্ত এক গোলে শিরোপা জিতে নেয় জার্মানি। বিশ্বকাপ বঞ্চিত থাকতে হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি এবং আর্জেন্টিনাকে।
সেই মেসির দলটিই এবার কিনা রাশিয়া বিশ্বকাপে অযোগ্যদের কাতারে চলে যাচ্ছিল প্রায়। বাছাই পর্বে তারা ছিল একেবারে খাদের কিনারে। প্লে-অফ খেলার যোগ্যতাও অর্জন করবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল আর্জেন্টাইনরা। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরর মাটিতে গিয়ে তাদের বিপক্ষে অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক করলেন মেসি। তার এই হ্যাটট্রিকেই শেষ মুহূর্তে রাশিয়া বিশ্বকাপে নাম লেখায় আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপের এটি ২১তম আসর। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা খেলেনি ৪ বার। ১৬৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড, আর ১৯৭০ সালে মেক্সিকোতে নিজেদের অযোগ্যতায় বিশ্বকাপে অংশ নিতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। আর ১৯৩৮ সালে ফ্রান্স এবং ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে নিজেরাই খেলতে যায়নি তারা। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসর, ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপ এবং সবশেষ ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে রানারআপ দলের তালিকায় নাম ওঠে আর্জেন্টিনার। ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল এছাড়া সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি আর।
১৯৭৪ সালের পর থেকে নিয়মিতই বিশ্বকাপে খেলছে আর্জেন্টাইনরা। ১৯৭৮ সালে মারিও কেম্পেসের হাত ধরে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছিল দেশটিকে। এরপর ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপটা শুধুই আর্জেন্টিনাময়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে এই বিশ্বকাপেই বিশ্ববাসী দেখতে পেলো দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো এক জাদুকরকে। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে তার অসাধারণ গোলের আগের ম্যাচেই (কোয়ার্টার ফাইনালে) ইংল্যান্ডকে উপহার দেন ‘ঈশ্বরের হাত’ এবং ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। এমন দুটি গোলে পুরো পৃথিবীকে তিনি এমনই হতভম্ব করে দিলেন যে সেই ‘দিয়েগো-ক্রেজ’ ধরাধামে আর্জেন্টিনাকে অন্যতম জনপ্রিয় দলে পরিণত করল। আজও আর্জেন্টিনা জগৎজোড়া খ্যাতির মূল কারণ দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা।

মন্তব্যসমূহ