‘গুহায় আটকে পড়া ফুটবল দলটির বের হতে কয়েক মাস লেগে যাবে’
ডুবুরিরা জানান, ১৩ জনের সবাই সেখানে আছে এবং তারা খুবই ক্ষুধার্ত
(আমারদেশ মাল্টিমিডিয়া) থাইল্যান্ডে পাহাড়ের গুহায় আটকে পড়া ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচকে জীবিত পাওয়া গেলেও তাদেরকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসতে কয়েক মাস পর্যন্ত লাগতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
২৩ জুন, শনিবার থাইল্যান্ডের পার্বত্য এলাকার থাম লং নাং নন গুহায় ১২ জন খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ আটকে পড়েছিলেন।
৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২ জুলাই, সোমবার দলটিকে খুঁজে পায় ব্রিটিশ উদ্ধারকারী ডুবুরিদের একটি দল।
থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশের পাহাড়ি গুহাটির ভেতর এমনভাবে পানি ঢুকে পড়েছে যে, তাদের সেখান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার পথটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। আর ১৩ জনের ফুটবল দলটি সেই গুহার মধ্যে একটি কার্নিশের মতো শুকনো খাঁজে বসে আছে।
উদ্ধারকর্মীরা ও সেনাবাহিনী বলছে, দলটি এমন জায়গায় আটকা পড়ে আছে যে, গুহার বাইরে আসতে হলে তাদের ডুবুরির মতো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরানো শিখতে হবে, অথবা কয়েক মাস গুহার মধ্যেই অপেক্ষা করতে হবে, যতদিন পানি নেমে না যায়।
সেনাবাহিনী বলছে, তাদেরকে হয়তো আগামী চার মাস ধরে বাইরে থেকে খাবার পাঠাতে হবে।
গুহায় একটি শুকনো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে খুদে ফুটবলাররা। ছবি: বিবিসি
চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারোংসাক ওসোত্থানাকন বলেন, ‘উদ্ধারকারীরা এখন জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, কীভাবে ক্রমাগত বাড়তে থাকা পানি অতিক্রম করে দলটির কাছে খাবার ও অন্যান্য সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়। গুহার ভেতরে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন বসানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে, যাতে এই কিশোররা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারে।’
কীভাবে তাদের পাওয়া গেল
চিয়াং রাই প্রদেশের একটি গুহায় প্রবেশের পর নিখোঁজ হওয়া তরুণ ফুটবলারদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে দেশটির উদ্ধারকর্মী ও সেনাবাহিনী। পরে তাদের উদ্ধারের জন্য থাইল্যান্ডে আসেন দুজন ব্রিটিশ ডুবুরি। ২ জুলাই, সোমবার রাতে ওই দুজন ডুবুরি তাদেরকে খুঁজে পান।
থাই নৌবাহিনীর বিশেষ দল আটকে পড়া দলটির সঙ্গে উদ্ধারকারীদের প্রথম যোগাযোগের মুহূর্তের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেছে।
টর্চের আলোয় দেখা যায়, ওই কিশোররা গুহার মধ্যে একটি কার্নিশের মতো জায়গায় বসে আছে। ডুবুরিরা জানান যে, ১৩ জনের সবাই সেখানে আছে এবং তারা খুবই ক্ষুধার্ত।
তরুণ ফুটবলাররা জানতে চান, কখন তারা এখান থেকে যেতে পারবে।
ডুবুরিরা তাদের বলেন, ‘তাদের অপেক্ষা করতে হবে, আরও লোক সেখানে আসবে। তখন একজন কিশোর বলে, ঠিক আছে, কাল দেখা হবে।’
এর আগে গুহার প্রবেশপথে তাদের সাইকেল পাওয়া গিয়েছিল। এরপর উদ্ধারকারী দল প্রথম খুঁজে পায় তাদের পায়ের জুতা এবং ব্যাগ।
ওই দলটি ২৩ জুন, শনিবার গুহায় প্রবেশ করে। পরে ২৪ জুন প্রবল বৃষ্টির পানিতে গুহার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতেই আটকে পড়ে তারা।
এ সংক্রান্ত আরও পড়ুন: গুহায় আটকে পড়লে কী করতে হবে?
প্রবল বৃষ্টিপাতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হলে পানি তোলার পাম্প বসানো হয়, রোবট ব্যবহার করা হয়। পরে উদ্ধারকারীরা নিখোঁজদের পায়ের ছাপ আবিষ্কার করেন, কিন্তু ছেলেদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
পাহাড়টির যে এলাকায় আটকা পড়েছে তারা। ছবি: বিবিসি
যেহেতু বৃষ্টি অব্যাহত ছিল তাই উদ্ধারকারীরা গুহায় ঢোকার অন্য রাস্তা খুঁজতে থাকেন। এ সময় উদ্ধারকারীদের রীতিমতো সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়, যাতে করে গুহার ভেতরে পানির উচ্চতা বেড়ে না যায়। কিন্তু গুহায় ঢোকার প্রধান প্রবেশপথটি বৃষ্টির কারণে একেবারে প্রবেশের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
এরপর খোঁজা শুরু হয় একটা চিমনির। গুহার উত্তর দিকে একটা প্রাকৃতিক চিমনি আবিষ্কার করা হয়।
২৯ জুন গুহার ভেতরে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। উদ্ধারকর্মীদের এটাই সুযোগ করে দেয় ভেতরে ঢোকার; তাদের আশা বাড়তে থাকে।
সোমবার রাতে খবর আসে, তাদের সবাইকে জীবিত এবং নিরাপদ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই খবরে, অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলো আনন্দে উল্লাস প্রকাশ করে।
এখন চলছে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা। আর সে জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন স্বজনরাসহ পুরো পৃথিবীর মানুষ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আমারদেশ মাল্টিমিডিয়া //
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন